প্রকাশিতঃ রবিবার, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯ পঠিতঃ 192780
হে বিজয় দিবস!
একাত্তরের এই দিনে তুমি এসেছিলে বাংলায়,
দু’লাখ মা-বোনের ইজ্জত আর ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে।
তুমি ছিনিয়ে এনেছিলে স্বাধীনতার লাল সূর্যটাকে,
মুক্তি-পাগল ঝাঁক ঝাঁক তরুণ-তরুণীকে নিয়ে।
আজ এই বিজয় দিবসের পলকে ফিরে দেখি বার বার,
সহযোদ্ধা আর চিরতরে হারানো কত বন্ধু-স্বজনের মুখ।
আজ এই বিজয় দিবসের উল্লাসের ফাঁকে ঘুরে আসি এক বার,
মাঠের কিনারে কিংবা নদী পাড়ে শুয়ে যাঁরা পেল অনন্ত সুখ।
তোমাকে ছিনিয়ে আনতে মুক্তি পাগল কৃষক ছেড়েছিল চাষাবাদ,
শ্রমিক ছেড়েছিল ফ্যাকট্রি, ছাত্র-শিক্ষক ছেড়েছিল বিদ্যাঙ্গণ।
পেশাজীবী ছেড়ে ছিল পেশা, মজুর কাঁধে নিয়ে ছিল লাঠি-সোটা,
তারামন, সন্ধ্যারাণী, পল্লীর দুরন্ত তরুণ যুদ্ধ করে প্রাণ পণ।।
খালে-বিলে, জঙ্গলে, কাদা-বর্ষায়, জেঁকে ধরে জোঁক,
কখনো অভূক্ত, কখনো পিপাসার্ত কাটে কঠিন সময়।
সাতই মার্চে বঙ্গবন্ধুর বীজমন্ত্রে উদ্দীপিত, শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে,
স্বদেশের মাটি ভিজাল যাঁরা, তাঁদের কথা ক’জনে কয়?
আজও কানে বাজে মা-বোনের চিৎকার ‘বাঁচাও, বাঁচাও!’,
যেভাবে প্রাণ দিল জি.সি.দেব, ফজলে রাব্বী আরো কত শহীদের দল।
আট চল্লিশ বছর পরেও শহীদের রক্তের ঋণ পারিনি শোধাতে,
ঘৃণা করি হায়েনাদের, মুমূর্ষুরে দেয়নিকো যারা পিপাসায় জল।
নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ অবসানে, সূর্য সন্তানেরা ছিনিয়ে আনলো তোমাকে,
দখলদারের কবল মুক্ত করতে তাঁরা পাড়ি দিয়েছিল রক্তেরনদী।
দৃপ্ত হাতে বাংলার পতাকা পত্পত্ওড়ে মুক্তিযোদ্ধার হাতে,
একাত্তরের এই দিনে যৌথ কমান্ডে নিয়াজীর নতমস্তক, ভেঙ্গে যায় হানাদারের গদি।
তোমাকে ছিনিয়ে আনার দু’দিন আগের চিত্র চোখে ভাসে,
রায়ের বাজার আর মিরপুরের বধ্যভূমি আজও গুমরে কাঁদে।
আমার বাবার চোখ বাঁধা, হাত দুটো পিঠ-মোড়া, ক্ষত-বিক্ষত নিথরদেহ,
যন্ত্রণা-কাতর মুখখানা, ভুলিনি আজও আট চল্লিশ বছরবাদে।
আমার মায়ের নিটোল মুখখানা, ছোপ-ছোপ রক্তেভেজা,
আমার গর্ভধারিণী, স্তন্যদায়িণী রনি¯প্রাণউলঙ্গদেহ।
বুকফাটে জিজ্ঞাসায়, গর্জে ওঠে অস্ফুটআক্রোশ,
নৃশংস দখলদারের আজ্ঞাবাহী চায়নিকো ক্ষমা কেহ।
তবুও বুক বাঁধি আশায়, হে রক্ত সিক্ত বিজয় দিবস!
পলাশীর যুদ্ধের পর তুমিই প্রথম বাংলা করেছো মুক্ত।
সবুজ জমিনে রক্তিম সূর্য, তুমি গৌরবদীপ্ত মহান প্রতিশুতি
তুমিই মুক্তি যুদ্ধের গর্বিত ফসল, স্বজন-হারার আনন্দ-বেদনা যুক্ত।
তুমিই এই বাংলার সূর্য সন্তানের জীবন-মরণ, মূর্তমহোৎসব,
তুমি আপামর বাংলার চৈতন্যে ভাস্বর, আমার মুক্ত পৃথিবী।
তুমি আমার এক চোখের কান্না, আর এক চোখের আনন্দাশ্রæ,
হে আমার ভোরের সূর্য বিজয় দিবস! রহো, রহো চিরজীবী।
সিডরো মিডিয়া গ্রুপ অব পাবলিকেশন্স লিঃ-এর পক্ষে রিনা দাশ কর্তৃক উত্তরা রেসিডেন্সিয়াল এলাকা ঢাকা থেকে প্রকাশিত
 01701703442   ||   info@dailykalerkotha.com